সমীর হালদার
ইসলাম ধর্মের প্রধান দুইটি হাদিস গ্রন্থ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে সহ আরো কয়েকটি হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে, আল্লাহ পাক প্রতিদিনই রাতের একটি অংশে সাত আসমানের উপরে অবস্থিত তার সিংহাসন আরশ থেকে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন বান্দাদের প্রার্থনা ভালভাবে শোনার উদ্দেশ্যে। এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর আরশ থেকে তিনি বান্দাদের প্রার্থনা ঠিকঠাক শুনতে পান না, বা বান্দাদের প্রার্থনা ঠিকঠাক মত আরশ পর্যন্ত পৌঁঁছায় না। তাই এটি আল্লাহর বিশেষ একটি নেয়ামত যে, তিনি বান্দাদের একদম কাছাকাছি চলে আসেন যেন পরিষ্কারভাবে প্রার্থনা শুনতে পারেন এবং তাৎক্ষণিক প্রার্থনা কবুল করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, পৃথিবী থেকে মানুষের প্রার্থনা আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছাবার পদ্ধতিতে নানা গলদ রয়েছে। প্রার্থনাগুলো সেই পর্যন্ত পৌঁছাতেও অনেক সময় লেগে যায়। এই ত্রুটিগুলো সংশোধনের উদ্দেশ্যে, সেগুলো ঠিক করার জন্য তিনি রাতের বিশেষ সময়ে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে নিজেই চলে আসেন, প্রার্থনা ঠিকভাবে শোনার জন্য। আজকে আমাদের আলোচনা এই বিষয়ে। আশাকরি পাঠক মন দিয়ে আমাদের লেখাটি পড়বেন, তথ্যসূত্রগুলো যাচাই করবেন এবং নিজেদের যুক্তিবুদ্ধি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নিকটে আসার প্রয়োজন কী?
ধরা যাক, আমি দশতলা একটি বিল্ডিং এর দশতলাতেই থাকি। নিচের তলাতে যিনি থাকেন, তিনি রোজই আমাকে ডাকেন। কিন্তু, আমি শুধুমাত্র সন্ধ্যাবেলাতে দুই তলার বারান্দায় এসে বসে থাকি, তার ডাক শোনার জন্য। ভেবে বলুন তো এই কাজটি আমি কেন করতে যাবো? দশ তলার উপর থেকেই যদি আমি তাৎক্ষণিকভাবে এবং খুব পরিষ্কারভাবে কথাগুলো শুনি, তাহলে আর আমার দুই তলাতে এসে উনার কথা শোনার দরকার হতো না। দশ তলা থেকে পরিষ্কার শোনা যায় না বা বোঝা যায় না, এরকম হলেই আমি শুধুমাত্র দুই তলাতে নেমে তার কথা শোনা শুনবো।
অনেক সময় দেখবেন, অনেকে মোবাইল ফোনটির মাইক্রোফোনটি মুখের কাছে এনে তারপরে কথা বলে। বা হেডফোনে গান শোনে। মাইক্রোফোনটি মুখের কাছে এনে শুনলে ঐপাশ থেকে ভালভাবে কথা শোনা যায়। আবার হেডফোনে শোনার কারণ হচ্ছে, এতে খুব পরিষ্কার সাউন্ড শোনা যায়। এগুলো যেকোন যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা। যন্ত্র মানুষের তৈরি এক একটি জিনিস। কিন্তু আল্লাহর কুদরতের তো কোন সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে না। তাহলে, আল্লাহ কেন আরশ থেকেই প্রার্থনা না শুনে, নিকটবর্তী আসমানে এসে শোনেন? পরিষ্কারভাবে শোনার জন্য?
বর্তমান সময়ে সাধারণভাবে বলতে পারি, সবচাইতে বেশি দ্রুতি হচ্ছে আলোর। SI এককের সংজ্ঞা অনুসারে আলোর দ্রুতি প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার (বস্তুত এটা মিটারের আধুনিক সংজ্ঞা)। যদিও আলোর চাইতে বেশি গতিতে বিগ ব্যাংয়ের পরে মহাবিশ্বের প্রসারন ঘটেছিল, সেটি বাদ রেখে সাধারণ হিসেবেই যদি হিসেব করি, তাহলে কী হয়?
ধরে নিই, মানুষ পৃথিবীতে বসে প্রার্থনা করছে। যেই মূহুর্তে সে প্রার্থনাটি করছে, প্রায় আট মিনিট পরে সূর্যে অবস্থানকারী (তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি) কেউ বিষয়টি জানতে পারবে। কারণ, গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় নেয়। আবার, পৃথিবী থেকে ‘এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি’ এর দূরত্ব ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের এখান থেকে সবচাইতে বেশি দ্রুতির আলো এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দিকে তাক করে মারলে, এন্ড্রোমিডার কেউ সেটি ২৫ লক্ষ বছর পরে দেখবে। ততদিনে আমরা মরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। মহাবিশ্ব তো আরো অনেক বিশাল, আরো অনেক বড়। এই মহাবিশ্বের বাইরে যদি আল্লাহ থাকেন, তার কাছে প্রার্থনা পৌঁছাতে তো আরো অনেক সময় লেগে যাওয়ার কথা। এই কারণেই কী কারো প্রার্থনা কবুল হয় না? দেখা যায়, প্রার্থনা আল্লাহর আরশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সে বংশশুদ্ধ মরে ভুত হয়ে গেছে। তখন আর প্রার্থনা শুনে কী লাভ?
এই কারণেই কী আল্লাহ সময় বাঁচাতে নিকটবর্তী আসমানে চলে আসেন? বিষয়টি গোলমেলে। আসুন, আমরা তথ্যগুলো যাচাই করে দেখি।