Opinion

নবী মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু

আজমাইন শাহরিয়ার অর্ণব, যুক্তরাজ্য

ভূমিকা

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মদ মক্কা, মদিনা ও অন্যান্য অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। অসংখ্য মানুষকে তিনি বানিয়েছেন দাস দাসী, দখল করেছেন তাদের জায়গা সম্পত্তি, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা এবং তাদের ক্রীতদাস দাসী বানানো ছাড়াও তার অপরাধের পরিমাণ বিপুল। এমনকি, কাফের নারীদের স্বামী ভাই পিতাদের হত্যা করে তাদের গনিমতের মাল নাম দিয়ে সেইসব ক্রীতদাসীদের সাথে যৌন সংগম করেছেন, সাহাবীদেরকেও করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তার ভয়ংকর জিহাদের কবলে ঘরবাড়ি হারিয়েছে অনেক মানুষ, স্বজনকে লাশের পাহাড় আর অমুসলিমদের উপাসনালয়ের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ইসলামের নবী গড়ে তুলেছেন তার ইসলামী সাম্রাজ্য। এতকিছু করেও তার মৃত্যু কিন্তু খুব সুখকর হয় নি। তার মৃত্যু হয়েছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং যন্ত্রণাকাতর। আজকের আলোচনা নবী মুহাম্মদের মৃত্যু। সেটি কেন, এবং কীভাবে হয়েছিল তার বিবরণ।

মৃত্যু ভয়ে ভীত থাকতেন নবী

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা থাকবার পরেও, জিবরাইলের মত শক্তিমান ফেরেশতা এবং আরও হাজারো ফেরেশতা বাহিনী তার সাথে থাকবার পরেও, তিনি শত্রুদের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারতেন না। উনার পাহারাদার লাগতো, কারণ তিনি ভয় পেতেন কেউ এসে তাকে খুন করে যেতে পারে। 

খায়বারে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ

একের পর এক ইহুদী গোত্র ভিটেমাটি ছাড়া করা এবং কয়েকটি ইহুদী গোত্রের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালাবার কারণে ইহুদী গোত্রসমূহ নবী মুহাম্মদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিল। বিশেষ করে বনূ কুরাইযা গোত্রের ৬০০-৯০০ পুরুষকে একদিনে হত্যা করায় তারা ব্যাথিত ছিল, তারা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু সংখ্যা এবং শক্তিতে কম হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছিল না। খায়বারে আক্রমণের সময় নবী মুহাম্মদ যয়নব বিনতে হারিস নামক এক ইহুদী নারীর বাসায় খাবার খেয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ খেতে দেয়া হয়। মাংশের সামান্য অংশ নবী মুহাম্মদও মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন (এর প্রমাণ পরে দেয়া হবে)। কিন্তু একজন সাহাবীর মৃত্যুতে তিনি মুখে থাকা খাবারের অংশ ফেলে দেন এবং ইহুদী নারীকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি খাবারে বিষ মিশিয়েছেন কিনা। ইহুদী নারীটি উত্তর দেয়, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে এই বিষে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি কেবল আক্রমণকারী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম।

নবীর শরীরে বিষের লক্ষণ

ইহুদি মহিলার দেয়া বিষযুক্ত মাংস খেয়ে নবী মুহাম্মদের কোন ক্ষতি হয়েছিল কিনা, সেটি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইহুদি মহিলা খুব পরিষ্কারভাবেই বলেছিলেন, মুহাম্মদ নবী হয়ে থাকলে সেই বিষ মুহাম্মদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। সেটি এক অর্থে ছিল মুহাম্মদের নবুয়্যত্ব সম্পর্কে সেই ইহুদি মহিলার চ্যালেঞ্জও। হাদিস থেকেই জানা যায়, সেই বিষে মুহাম্মদের শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল। নবী মুহাম্মদ যে বিষ খানিকটা মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন, সেটি যে তার শরীরে প্রবেশ করেছিল এবং তার শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আরেকটি সহিহ হাদিসে। তার শরীরে পরিষ্কার বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। একজন প্রখ্যাত সাহাবীর সহিহ হাদিস অনুসারে, তিনি নবীর আলজিহবা এবং তালুতে এরপর থেকে বিষের ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতেন। উল্লেখ্য, সেই ইহুদী নারী নবীকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, যে সে আসলেই নবী হয়ে থাকলে তার কোন ক্ষতিই হবে না। এই কারণে নবী তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করতে পারেন নি, তবে পরে ঠিকই হত্যা করেছিলেন।

সুস্থ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন নবী

নবী মুহাম্মদ এই বিশাল মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের প্রেরিত রাসুল এবং ফেরেশতা-জ্বীন-ইনসান সকলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলে নিজেকে দাবী করার পরেও, তার আল্লাহ, ফেরেশতা বাহিনী, জ্বীন বাহিনী, কেউই তাকে খায়বারের সেই বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ বিষয়ে এতটুকু সাবধান করে নি। বিষয়টি খুবই সন্দেহজনক। এতবড় মহাবিশ্বের স্রষ্টার সবচাইতে কাছের বন্ধু নবী মুহাম্মদ, যার আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ ভেঙ্গে দুইভাগ হয়ে যায়, যার মোজেজার কোন সীমা নেই, যার ক্ষমতা ও মর্যাদা সব মানুষ, ফেরেশতা ও জ্বীনের চাইতেও বেশি, আল্লাহ বা ফেরেশতারা একটু আগে সাবধান করলেই তার আর বিষক্রিয়ায় যন্ত্রনা নিয়ে মরতে হতো না। পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ বেঁচে উঠার, সুস্থ হওয়ার অনেক চেষ্টাই করেছেন, কিন্তু সফল হন নি। বিষ তো আর আল্লাহ নবী রাসুল চেনে না, বিষ তার স্বাভাবিক কাজই করে।

হাফসা ও আয়িশার বিদ্রোহ

অনেকগুলো তথ্যসূত্র থেকেই জানা যায়, মারিয়া কিবতিয়া নামক যৌনদাসীর সাথে যৌনসম্পর্কের জের ধরে হাফসা, আয়িশা এবং নবী মুহাম্মদের পারিবারিক ঝামেলা এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল যে, নবী সকল স্ত্রীকে একসাথে তালাক দিয়ে নতুন বিবি আনার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই পুরো ঘটনাটি অনেক দীর্ঘ হওয়ার এই বিষয়টি আলাদা পোস্টে লেখা হচ্ছে [39]। আপাতত এইটুকুই আমরা জেনে রাখি যে, নবী, আয়িশা ও হাফসার সম্পর্ক খুব ভাল ছিল না। আয়িশা এবং হাফসা রীতিমত জিম্মি হয়েই ছিলেন, নবীর স্ত্রী হিসেবে। এই নিয়ে আয়িশা ও হাফসার কষ্ট ছিল। উপরে দেয়া লিঙ্কের লেখাটি মন দিয়ে পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

নবীর প্রতি আয়িশার ক্ষোভ

সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এইরকম কষ্টকর মৃত্যুশয্যাতেও নবী মুহাম্মদের ফুলের মত সুন্দর চরিত্র নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েন নি নবীর প্রিয় স্ত্রী আয়িশা। নবীর সিরাত গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৃত্যুশয্যাতেও আয়িশা নবীকে বলছেন, নবীর আগে যদি আয়িশার মৃত্যু হতো, তাহলে নবী আয়িশাকে দাফন করেই আরেক বিবি নিয়ে আয়িশার ঘরেই আরেক বিবি তুলতেন। অর্থাৎ, নবীর চরিত্র আয়িশা খুব ভালভাবেই জানতেন এবং বুঝতেন

আলীর প্রতি উমরের হিংসা

এবারে আসুন, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে আরো পড়ি [36]। লক্ষ্য করুন, আলীর সম্পর্কে নবীর প্রশংসায় উমরের শুভেচ্ছা জানানোর ভঙ্গিটি। মনে রাখা জরুরি যে, পরবর্তীতে মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় এই উমরই কিন্তু কাগজ নিয়ে আসতে বাধা দিয়েছিল। আরো লক্ষ্যনীয় যে, আলীর বিষয়ে বক্তব্যের পরেই ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার কোরআনের আয়াতটি নাজিল হয়।

নবীর শহীদী মৃত্যু হয়েছিল?

অনেক মুমিনই ইদানিং নির্যাতিত ইহুদি রমনীর দেয়া বিষাক্ত খাবার খেয়ে নবী মুহাম্মদের এই নির্মম মৃত্যুর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে দাবী করেন, আল্লাহই নাকি নবীকে শহীদী মৃত্যু দেয়ার জন্য এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহই যদি নবীকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য নবীকে বিষ খাইয়ে থাকেন, এতে তাহলে সেই ইহুদি নারীর কী অপরাধ? নবীর সাহাবী হযরত বিশরকে হত্যার অপরাধে তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? নবীকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য ঘটনা ঘটালেন আল্লাহ, এই ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তার দায় তো সম্পূর্ণ আল্লাহর। সেই মহিলাকে কেন তাহলে কতল করা হয়েছিল? একইসাথে বলতে হয়, মুমিনদের এই দাবীটি কোনদিক দিয়েই ধোপে টেকে না৷ কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, নবীর যদি কোন অকল্যাণ হয়, তার জন্য নবীর কৃতকর্মই দায়ী, আল্লাহ নয়।

উপসংহার

এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই যে, নবী মুহাম্মদকে আয়িশা এবং হাফসা, উমর ও আবু বকরের পরিকল্পনা মোতাবেক ঔষধের নামে বিষ খাইয়ে হত্যা করেন কিনা। নবীর পরিবারের কাছ থেকে সকল গনিমতের মাল হস্তগত করা [44] এবং শাসন ক্ষমতা নিজেদের কাছে রাখার জন্য আবু বকর ও উমর এরকম পরিকল্পনা করে থাকলে অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না। ইতিহাসে এরকম ঘটনা অসংখ্য। এরপরে একে একে আলী, হাসান হোসেনকেও হত্যা করা হয়। তাই নবীকে আয়িশা ও হাফসা মৃত্যুর সময়ে বিষ খাইয়েছিল কিনা, সেই বিষয়ে সন্দেহের কিছু অবকাশ থাকে। তবে এটি একেবারেই নিশ্চিত করে বলা যায় যে, নবী মুহাম্মদের মৃত্যু হয়েছিল বিষক্রিয়ায়, যা নবীর কথা থেকেই পরিষ্কার। একইসাথে, নবীর মৃত্যুও হয়েছিল অত্যন্ত নির্মমভাবে, প্রচণ্ড যন্ত্রনাভোগ এবং ধুঁকে ধুঁকে মরেছিল । একইসাথে, সেই ইহুদি নারী যে মুহাম্মদকে বিষ খাইয়েছিল, তার বিষ কাজ করেছিল বলেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এ থেকে কী প্রমাণ হয়, তা পাঠকদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *