Opinion

“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে”

হৃদয় কৃষ্ণ যাদব, যুক্তরাজ্য

তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না

সুরা ১০৯ঃ৬ এ বলা আছে “লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে।” কোরানে এমন ২/৪ টি আয়াত আছে অবশ্য যেখানে মনে হবে ইসলাম অন্য ধর্মের ব্যপারে অনেক সহনশীল। যারা পুরো কোরান, হাদীস অর্থ, তরজমা, তাফসীরসহ পড়ে দেখেননি তারা এমনটি মনে করতেই পারেন। তারাই আবার বলে সূরার শানে নযূল, প্রেক্ষিত সব জানতে। কিন্তু তারা যখন নিজেরা এই সমস্ত ২/৪ টি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে অন্যদিকে ডজন ডজন ভয়ংকর আয়াতকে লুকিয়ে রাখেন নিজেদের সেই প্রেক্ষিত জানার কথা তাদের মাথায় থাকে না। কোরানের সূরাসমূহের নাজিলের ধারাবাহিকতা, নবী মোহাম্মদের মক্কা জীবন, মদীনার জীবন না জানলে এগুলো বোঝা আসলেই কঠিন। যার যার ধর্ম তার তার কাছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না – এগুলো তখনই বলা হয়েছিলো যখন ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষদের থেকে আক্রান্ত হয়েছিলো, ইসলামের নিজের অস্তিত্ব অন্যদের থেকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই সমস্ত আয়াত এসেছিলো। কিন্তু ইসলাম যখন অন্যদের আক্রান্ত করেছে, জয়ী হয়েছে তখন আয়াত ছিলো ভিন্ন, তখন অন্যদের আক্রমন করতে বলা হয়েছে, ঘৃনা করতে বলা হয়েছে, বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে হত্যাও করতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দেখেন,

২ঃ১৯১

“আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।”

ইসলামে বলা হয়েছে অমুসলিমরা নিকৃষ্টতম প্রাণী, সৃষ্টির অধম, নর্দমার কীট সমতুল্য। ইসলাম ত্যাগী, নবীর সমালোচনাকারীকে হত্যা করতে বলা হয়েছে। নবীর সমালোচনাকারী তওবা করলেও তার এই শাস্তি থেকে সে রেহাই পায় না।

কোরানের পাতায় পাতায় রয়েছে অমুসলিমদের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, গালাগালি আর অভিশাপ। সময় করে এই আয়াতগুলো দয়া করে অর্থ, তরজমা, তাফসিরসহ পড়ে নিবেন 2:7, 2:10, 2:15, 2:17, 2:26, 2:88, 2:161, 3:61, 3:87, 3:178, 4:46-47, 4:88, 4:115, 4:143, 4:155, 5:13, 5:14, 5:41, 5:49, 5:60, 5:64, 5:67, 6:25, 6:110, 6:123 … ইত্যাদি।

ইসলাম তখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে বিশ্বাস করে, ততোক্ষন পর্যন্ত ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন’ আওড়ায় যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিম থাকে সংখ্যালঘু বা নির্যাতিত। মুসলিম সংখ্যাগুরু হলেই তারা শরিয়া আইন দাবী করে, জিজিয়া কর দাবী করে অমুসলিমদের থেকে, অমুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসাবে দেখে এবং দেশের শাসন নিজেদের হাতে নিতে চায়।

কোরানে অমুসলিমদের সম্পর্কে বিভিন্ন কটূক্তি করা হয়েছে। নিচে তা সূরা ও আয়াত এর নাম্বারসহ উল্লেখ করা হল। আপনারা নিজে কোরান খুলে সূরা ও আয়াত নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিতে পারেন। দয়া করে অর্থ, তরজমা-তাফসিরসহ পড়ে নিবেন। যদি কোরান মানতে চান তাহলে অমুসলিমদেরকে ওরকম মনে করতে হবে, কারণ তা কোরানে আছে। বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতায় এটা কি সম্ভব ? আপনার নিজের বিবেক কি বলে এক্ষেত্রে ? ফানফ্যাক্ট হলো ইসলামে অমুসলিমদের সারাক্ষন ঘৃনা করতে বলা হয়, অভিশাপ দিতে বলা হয়, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয় কিন্তু মুসলমানরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই অমুসলিমদের আবিষ্কৃত টেকনোলজির সাহায্য ছাড়া বর্তমানে একটি দিনও পার করতে পারবে না।

দেখেন কোরানে কত জঘন্য ভাষায় অমুসলিমদের আক্রমন করা হয়েছে

তারা গাঁধা ৬২ঃ৫, ৭৪ঃ৫০

তারা কুকুর ৭ঃ১৭৬

তারা গরু বাছুর ৭ঃ১৭৯, ২৫ঃ৪৪, ৪৭ঃ১২

তারা দুর্ভাগা ২ঃ১২১, ৩ঃ৮৫, ৫ঃ৫, ৮ঃ৩৭, ১০ঃ৯৫, ২৭ঃ৫, ২৯ঃ৫২, ৩৯ঃ৬৩, ৩৯ঃ৬৫

তারা পাপিষ্ঠ ৮ঃ৩৭

তারা উদ্ধত ৬ঃ১৪৬, ৭ঃ১৬৬, ৪০ঃ৭৫, ৬৭ঃ২১

তাদের পাষাণ হৃদয় ৩৯ঃ২২, ৫৭ঃ১৬

তারা কালা (শ্রবণশক্তিহীন) ২ঃ১৭১, ৫ঃ৭১, ৬ঃ৩৯, ১৭ঃ৯৭, ৩০ঃ৫২

তারা অন্ধ ২ঃ১৭১, ৫ঃ৭১, ১৭ঃ৯৭, ৩০ঃ৫৩, ৪১ঃ৪৪

তারা নির্বোধ ২ঃ১৭১, ৬ঃ৩৯, ১৭ঃ৯৭

তারা জ্ঞানহীন ৬ঃ১১১, ৩৯ঃ৬৪

তারা কঞ্জুস ৪ঃ৩৭

তারা বিদ্বেষপূর্ণ ৩ঃ১২০

তারা অপরাধী ৫ঃ৬৪, ৫ঃ৭৮, ৬ঃ১১০, ৭ঃ১৮৬, ১০ঃ১১,১০ঃ৭৪, ৩৭ঃ৩০, ৫০ঃ২৫

তারা কলুষিত ৫ঃ৬৪, ১০ঃ৪০

তারা নোংরা ৯ঃ২৮

তারা নগণ্য ১৯ঃ৭৩-৭৪

তারা বিশ্বাসঘাতক ৫ঃ১৩, ২২ঃ৩৮

তারা মিথ্যাবাদী (১০ টির বেশি আয়াত)

তারা বিপথগামী ৫ঃ৭৫, ৯ঃ৩০, ১০ঃ৩৪, ৩৫ঃ৩, ৪০ঃ৬৩

তারা পরশ্রীকাতর ২ঃ৯০, ২ঃ১০৯, ২ঃ২১৩, ৩ঃ১৯

তারা অন্যায়কারী (১০ টির বেশি আয়াত)

তারা অধঃপতিত ৫ঃ৪১

তারা দুর্বল ২২ঃ৭৩

তারা বিভ্রান্ত ৩ঃ২৪, ৬ঃ১৩০, ৭ঃ৫১, ৩৫ঃ৪০, ৪৫ঃ৩৫, ৬৭ঃ২০

তারা অহংকারী (১০ টির বেশি আয়াত)

তারা বেপরোয়া (১০ টির বেশি আয়াত)

তারা আত্মাভিমানী ৩৮ঃ২

তারা অকৃতজ্ঞ ২২ঃ৩৮, ৩৫ঃ৩৬, ৩৯ঃ৩

তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে জঘন্যতম পশু ৮ঃ৫৫

তারা সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব ৯৮ঃ৬

তারা আল্লাহর শত্রু ২ঃ৯৮, ৮ঃ৬০, ৪১ঃ২৮, ৬০ঃ১

তারা মুসলমানের শত্রু ৪ঃ১০১, ৮ঃ৬০, ৬০ঃ১-২

তারা অপবিত্র হৃদয় অধিকারী ৫ঃ৪১

তারা পরের দুর্দশায় আনন্দ করে ৩ঃ১২০

আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন ৩৫ঃ৩৯, ৪০ঃ১০

আল্লাহ তাদের ভালবাসেন না ৩ঃ৩২, ২২ঃ৩৮, ৩০ঃ৪৫

আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেন ৩ঃ১৪১, ১৭ঃ৫৮, ২১ঃ৬, ২৮ঃ৪৩

আল্লাহ তাদের লাঞ্ছিত করেন ৯ঃ২, ১৬ঃ২৭

আল্লাহ তাদের কলুষিত করেন ৬ঃ১২৫, ১০ঃ১০০

আল্লাহ তাদের নির্যাতন করেন ৪ঃ৫৬, ১৮ঃ২৯, ২২ঃ১৯-২২, ৪০ঃ৭১-৭৩

আল্লাহ তাদের পরিত্যাগ করেন ৭ঃ৫১, ২০ঃ১২৬, ৩২ঃ১৪, ৪৫ঃ৩৪

আল্লাহ তাদের অভিশাপ দেন (১০ টির উপরে আয়াত)

আল্লাহ তাদের অপমানিত করেন (১০ টির উপরে আয়াত)

আল্লাহ তাদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করেন ৩ঃ১৫১

আল্লাহ তাদের শিম্পাঞ্জি বানিয়ে দেন ২ঃ৬৫, ৫ঃ৬০, ৭ঃ১৬৬

আল্লাহ তাদের শুকর বানিয়ে দেন ৫ঃ৬০

আল্লাহ তাদের শয়তানের উপাসক বানিয়ে দেন ৫ঃ৬০

আল্লাহ তাদের গাঁধা বানিয়ে দেন ২৩ঃ৪১

আল্লাহ তাদের পিছনে শয়তান লেলিয়ে দেন ১৯ঃ৮৩

আল্লাহ তাদের ভাল কাজ হিসাবে ধরেন না ১৮ঃ১০৫

মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এমন কোন ব্যক্তি যদি পরে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অথবা ধর্মহীন হয় ইসলামে তার শাস্তি হত্যা। নবী মোহাম্মদকে সামান্য নিন্দা বা সমালোচনা করলে, এমনকি তার কোন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বা সন্দেহ করলে, তার মতের সঙ্গে ভিন্নমত দিলেও সে ইসলামের দৃষ্টিতে হয়ে যায় শাতিমে রাসূল। আর শাতিমে রাসূলের শাস্তি হত্যা। কোন ক্ষমা বা অনুকম্পা তাকে দেখানোর সুযোগ নেই ইসলামে।

এমন জঘন্য বর্বরতা যেখানে আছে তার সমালোচনা করা বিশ্বের প্রতিটা বিবেকবান মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *