বীপেন রাজবংশী, যুক্তরাজ্য
মানব ইতিহাসে মানুষের দ্বারা সংঘটিত সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং অন্ধকার এক অধ্যায়ের নাম দাসপ্রথা। প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ, এমনকি এই আধুনিক যুগেও অনেক সমাজেই দাসপ্রথা সামাজিক ও আইনানুগভাবে অনুমোদিত ছিল। এ ব্যবস্থায় বাজারে মানুষের আনুষ্ঠানিক বেচা-কেনা চলত এবং কিনে নেয়া মানুষটি ক্রেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে কাজ করতে বাধ্য থাকতো। তার কোন স্বাধীন ইচ্ছা কিংবা স্বাধীনতা, কোনটিই থাকতো না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় সব শাসন ব্যবস্থাতেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। গবাদিপশুর মত বাজার বসতো, সেখানে প্রকাশ্যেই মানুষেরও কেনাবেচা চলত। শেকলে বেঁধে বন্দী মানুষদের সেখানে ওঠানো হতো, মূল্য নির্ধারণ করা হতো, দরাদরি করা হতো, গরু ভেড়ার মত পরীক্ষা করে দেখা হতো, এরপরে এর মালিকানা হস্তান্তর করা হতো।
প্রায় সারাবিশ্বই ১৮ শতকের মধ্যেই দাসপ্রথা বিলুপ্ত করলেও মধ্যপ্রাচ্যে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে করতে ১৯৭০ দশক লেগে যায়। তাও আবার ব্রিটেনের ক্রমাগত চাপের কারণ। এর কারণ তো নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ ধর্মটি দাসপ্রথাকে শুধুমাত্র জায়েজই করে না, বরং উৎসাহিতও করে। বলা বাহুল্য যে, বাইবেল, বেদ এর কোনটাই দাসপ্রথার ব্যাপারে খুব একটা ভালো কিছু বলে না, তবে কুরআনকে এই ক্ষেত্রে এক কাঠি সরেসই বলা যায়।
ইসলাম-পূর্ব আরবে দাসপ্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের ধরে এনে দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো। সেই সময়ে আরবে নিয়মিত দাসবাজার বসত, যেখানে ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজন ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দাস ও দাসী কিনতে পারতেন। এই সময়ে কিছু দাস-মালিক দাসদের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করতেন, তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করাতেন। তবে, অন্যদিকে কিছু মালিক দাসদের প্রতি সদয় ছিলেন এবং মানবিকভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করতেন বলেও জানা যায়। দাসদের মুক্ত করা সেই সমাজেও একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো, এবং কিছু মালিক আনন্দের কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যে বা খুশির সংবাদে দাস মুক্ত করতেন।
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ নিজেই দাস কেনাবেচা অর্থাৎ দাস ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এটি কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা নয়, বরং ইসলামের বিধিবিধানের নৈতিক অবক্ষয়ের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। মুহাম্মদ নিজেকে একজন নবী হিসেবে দাবী করার পরেও, তিনি এই বর্বর প্রথার বিলোপ ঘটানোর পরিবর্তে নিজেই এর সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধবন্দীদের দাসে রূপান্তরিত করা এবং তাদের বিক্রি করা বা উপহার হিসেবে প্রদান করার মতো কাজ কোনোভাবেই নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এমনকি মুহাম্মদ নিজেও দাসদের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন, তাদের সাথে যৌন কর্ম করেছেন এবং তাদের কেনাবেচাও করেছেন। মুহাম্মদের এই কর্মকাণ্ড দাসপ্রথাকে বৈধতা প্রদান করেছে এবং ইসলামী সমাজে এটি প্রতিষ্ঠিত ও দীর্ঘস্থায়ী করেছে।
বনু কুরাইজা গোত্রের ওপর গণহত্যা চালাবার পরেও নবী মুহাম্মদ বনু কুরাইজা গোত্রের নারী ও শিশুদের দাস বানাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ইসলামিক আলেম শায়েখ সালেহ আল-ফাওজান হচ্ছেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা “ঊর্ধ্বতন উলামা পরিষদ”-এর একজন সদস্য যা ধর্মীয় ব্যাপারে বাদশাহকে উপদেশ প্রদান করে থাকে। ইসলামী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদান স্থায়ী কমিটি “ঊর্ধ্বতন উলামা পরিষদ” সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত একটি ইসলাম বিষয়ক পরিষদ। এই পরিষদটি ঊর্ধ্বতন ধর্মতত্ত্ববিদের দ্বারা ইসলামী আইন বা ফিকাহ-এর বিষয় ও বিধিবিধান এবং গবেষণা পত্র প্রণয়ন করে থাকে। তিনি বলেছেন – “দাসপ্রথা ইসলামের অঙ্গ। দাসপ্রথা জিহাদেরও অঙ্গ, এবং যতদিন ইসলাম ধর্ম থাকবে ততদিন জিহাদও থাকবে।“
ইসলামে যুদ্ধবন্দী হিসেবে প্রাপ্ত নারীদের সাথে হায়েজ হতে মুক্ত হওয়ার পরে যৌনসঙ্গম করার সম্পূর্ণ বৈধতা নবী মুহাম্মদ দিয়ে গেছেন। এই বৈধতা প্রদান থেকে একাধারে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়। যুদ্ধ বা জিহাদে বিজিত পক্ষের একজন রমণীকে স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে দাসীতে পরিণত করা যেমনি ইসলামে বৈধ তেমনি সেই রমণীটির অনুমতি ব্যতীতই তার সাথে বিজয়ী পক্ষের জিহাদি মুসলিম পুরুষটির যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া, যা কিনা সংজ্ঞানুসারে সরাসরি ধর্ষণ, সেটিও ইসলামে অনুমোদিত।
গত চৌদ্দশ বছরে ইসলামি নৃশংসতার বলি কত লক্ষ শিশুকে হতে হয়েছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। এই নৃশংসতার আসলে কোন তুলনা হয় না। যেই শিশুটি যুদ্ধের কিছু বোঝে না, কে কোন পক্ষ কিছুই সে জানে না, ঘটনাক্রমে একটি কাফের পরিবারে জন্ম নিয়েছে, একদিন হুট করে কিছু ইসলামি সেনা এসে তাদের বাবাকে মেরে মাকে বানালো যৌনদাসী, তাদের বানানো হলো দাস। এগুলো কী ভয়াবহ বিধান, কল্পনা করা যায় না। যখন মুহাম্মদ বা সাহাবীদের টাকার দরকার হতো, সেইসব শিশুদের বিক্রিও করা হতো বাজারে, গরু ছাগল ভেড়ার মত! এই ভয়াবহতার কোন সীমা নেই। যেই ইসলাম একটি শিশুকেও রেহাই দেয় না, সেই ইসলাম যখন পরিপূর্ণ জীবন বিধানের দাবী করে, শান্তি আর মানবতার দাবী করে, তখন মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে।
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে পরিষ্কারভাবে মালিকানাধীন বা অধিকারভূক্ত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক হালাল করা হয়েছে। দাসদাসীদের কেনাবেচা, যুদ্ধবন্দী নারী হিসেবে দাসী গ্রহণ করা, এগুলো সবই ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হালাল।
মুহাম্মাদ শুধু শিশু, নারী ও যুদ্ধবন্দীদেরই দাসদাসী বানাতেন কিংবা কেনাবেচা করতেন না, তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ দাস ব্যবসায়ী। মুহাম্মাদ কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের কেনাবেচা করতেন এবং একজন শ্বেতাঙ্গ দাসের মূল্য দুজন কৃষ্ণাঙ্গ দাসের সমান-এমন বিধিও প্রচলন করেন এসব সহিহ হাদিসেই উল্লেখ আছে।
অনেক মুসলিমই দাবী করেন, ইসলাম দাসপ্রথাকে বন্ধ করার পথ তৈরি করে গেছে। কিন্তু এগুলো একেবারেই মিথ্যাকথা। কারণ নবীর পরেই ওহী নাজিল বন্ধ হয়ে গেছে, এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই বিধানই বলবৎ থাকবে। মুহাম্মদ দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে মদ এবং সুদের মতই নিষিদ্ধ করে যেতেন।