প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে চীনে লাওৎসের আবির্ভাব। যদিও আজ নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না কোন সালে কোন মাসে কোনখানে তিনি জন্মেছিলেন। মনে করা হয় তিনি কনফুসিয়াস, বুদ্ধ, জেরয়াষ্টার, মহাবীর, পিথাগোরাস এবং প্রাক-সক্রেটিসক দার্শনিকদের বেশ কয়েকজনের সমসাময়িক ছিলেন। ঐতিহাসিকেরা একাধিক লাও ৎস এর অস্তিত্বে সম্পর্কে মতান্তর প্রকাশ করেছেন। লাওৎস শব্দের অর্থটা বেশ মজার, যা হলো ‘বৃদ্ধ-তরুণ’। লাওৎসে কে নিয়ে নানা রকম গল্প প্রচলিত আছে। একটি গল্প বলে যে লাওজি তার জীবনের ১৬০ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত অরণ্যে বাস করতেন। অনেকগুলি গল্পে লাওজি বুদ্ধকে শেখানোর জন্য ভারতে ভ্রমণ করার কথা বলে। কেউ কেউ বলে যে তিনি বুদ্ধ ছিলেন।
চীনা কিংবদন্তী অনুসারে লাও ঝৌয়ের রাজদরবারে পড়াশোনা করেছিলেন এবং প্রচুর সংখ্যক লোককে আকৃষ্ট করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর বেশিরভাগ কাজ সমগ্র ইতিহাস জুড়ে স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছিল। কিছু আধুনিক রাজনীতিবিদ মনে করেন যে লাওজিই প্রথম স্বাধীনতাবাদী, তিনি বিশ্বাস করতেন জনগনকে তাদের ইচ্ছামত থাকতে দেয়া উচিত। তিনি তিব্বতে চলে যাওয়ার জন্য চীন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং সীমান্ত অতিক্রম করার সময় শুল্ক কর্মকর্তা ইয়েন-হাই বিজ্ঞ ব্যক্তিটিকে চিনতে পেরে তাঁকে সত্য এবং জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর সাথে কথা বলতে বলেন। এই কথোপকথন চলেছিল এক বছর ধরে। পরে সেই শুল্ক কর্মকর্তার জন্য একটি উপহার এলো: ‘তাও-তে-কিং’। আসলেই সহজ পথ, সরল। সেই আড়াইহাজার বছর পূর্বে এত জটিলতা পূর্ণ বিষয় গুলোকে এত সহজ ভাবে বলেছেন, সেটা পড়লেই বিষ্ময়ে অভিভূত হই।
আবার অনেক প্রচলিত উপদেশ, কথকতা পা্ওয়া যায় তার রচনায়। তাহলে এসব জ্ঞানগর্ভ উপদেশ কি সেই হাজার হাজার বছর আগেই লাও ৎসে বলে গেছেন? লাও ৎসে ৩০ অনুচ্ছেদে বলেছেন ‘প্রতিটি শক্তির আছে বিপরীত প্রতিক্রিয়া,হিংসা হিংসাকে আমন্ত্রন জানায়।’ প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার সুত্রটি লাও ৎসে আড়াইহাজার বছর পূবেই জানিয়ে গেছেন। আর মাত্র সেদিন নিউটন আমাদেরকে জানালেন। ৮১ টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত ৫০০০ চীনা অক্ষরের সমন্বয়ে রচিত এ গ্রন্থটি। গ্রন্থটিকে কৌতুহলবোধক স্ববিরোধিতামুলক অনুষঙ্গ (প্যারাডক্স) আবিস্কার করা যায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মানসিক ভারসাম্য, চিত্তের সুস্থিরতা ও একটি সমাহিত চিত্ত রচনা করাই যেন তাও দর্শনের মুল কথা।