বীপেন রাজবংশী, যুক্তরাজ্য
একটি কথা প্রায়শই শোনা যায় যে, ইসলাম দুনিয়া এবং আখিরাতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে! পৃথিবীর লক্ষ কোটি মুসলিম এই ভেবে স্বান্তনা পায় যে, এই পৃথিবীতে তাদের সাথে ইনসাফ না হলেও, পরকালে অর্থাৎ কেয়ামতের ময়দানে তাদের সাথে অবশ্যই ইনসাফ হবে। পৃথিবীর মানুষ অনেক সময়ই অন্য মানুষের সাথে ইনসাফমূলক আচরণ করে না। এই যেমন ধরুন, মুজিবের কন্যা হাসিনা, জিয়ার স্ত্রী খালেদা কোন পুর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই দলের প্রধান পদ পেয়ে যান। আবার, কোন জমিদারের ছেলে কোন যোগ্যতা ছাড়াই ভাল স্কুলে সুযোগ পান। আমরা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষ সেই সুবিধাগুলো পাই না। আবার ধরুন ভারতে মুকেশ আম্বানীর সন্তানদের বিয়েতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ আমরা আমাদের সন্তানদের বিয়েতে টেনে টুনে খরচ করি। মুকেশ আম্বানীর সন্তান হিসেবে আমরা জন্ম নিলে আমরাও হয়তো অনেক দামি গাড়ি চালাতাম। কিন্তু সেগুলো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এই পৃথিবীর দুঃখ কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণার বিপরীতে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলিম এইটুকু ভাবতে ভালবাসেন যে, পরকালে আমাদের জন্য অনেক ভাল কিছু অপেক্ষা করছে। কিন্তু আসলেই কী এই দাবীগুলো সত্য? ইসলাম কি আসলেই দুনিয়ায় এবং আখিরাতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে? আল্লাহ পাক কি এই দুনিয়ায় এবং আখিরাতে সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের অনেকগুলো কোরআনের আয়াত এবং হাদিস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। আজকের লেখায় এমন কিছু তথ্য তুলে ধরবো এই আশাতে যে, পাঠকগণ মন দিয়ে তথ্যগুলো পড়বেন এবং নিজেই ভেবে দেখবেন, ইসলাম আসলেই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে কিনা।
নবী মুহাম্মদ তার পরিবারের অনেককেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। শুধু সুসংবাদই নয়, রীতিমত সর্দার হওয়ার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। নবীর পরিবারে ভাগ্যক্রমে জন্ম নেয়া বাদে তারা পৃথিবীর সকল মানুষের চাইতে কোন দিক দিয়ে উন্নত এবং মানুষের উপকারের জন্য তারা কী করেছে, তা বোধগম্য নয়। তথাপি, নবী তার কন্যা ফাতিমাকে জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। তিনি কী মারিয়া কুরী কিংবা মাদার তেরেসার চাইতেও মহান কিছু কাজ করেছেন? বা হাইপেশিয়া, কিংবা বেগম রোকেয়া? করে থাকলে সেগুলো কী? কোন যোগ্যতায় তিনি জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হলেন? নাকি, নবীর মেয়ে হওয়াই জান্নাতের সর্দার হওয়ার যোগ্যতা? শুধু তাই নয়, তার দুইজন নাতী হাসান এবং হোসেইনকেও জান্নাতের যুবকদের সর্দার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
ইসলামের বিধান হচ্ছে, কোন মানুষ যদি পশুর সাথে যৌনকর্ম করে, তাহলে যে কাজটি করেছে এবং যার সাথে করেছে, সেই পশুটিকেও হত্যা করতে হবে। পশুটির এখানে কী অপরাধ, তার কোন উত্তর নেই। এটা কি ইনসাফ?
নবী মুহাম্মদ একবার হযরত আলীকে একজন মুশরিক নারীর কাছে প্রেরণ করলেন, যেই নারীর কাছে একটি চিঠি ছিল। সেই নারী সেই চিঠিটির কথা অস্বীকার করলে, হযরত আলী তাকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি দান করেন। এরপরে বাধ্য হয়ে সেই নারী চিঠিটি হযরত আলীকে দিয়ে দেয়। সেই চিঠিটি যত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিই হোক না কেন, একজন নারীকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি কতটা ভয়াবহ হুমকি, তা আমরা সকলেই বুঝি। তল্লাশি যদি চালাতেই হয়, আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে নারী পুলিশ সদস্য দিয়েই যেকোন নারীকে তল্লাশি করা হয়। এমনকি, কোন বোরখা পড়া নারীকে সভ্য দেশগুলোর বিমানবন্দরে তল্লাশি চালালে সেটি একজন নারী পুলিশ সদস্যকে দিয়েই তল্লাশি চালান। যদি একইভাবে কোন মুসলিম বোরখা পড়া নারীকে ভারতের বিমানবন্দরে কোন পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী একই হুমকি দেয়, তাহলে মুসলিমরা কি তা মেনে নেবে? তারা কি বলবেন না, তল্লাশি যদি চালাতেই হয়, তাহলে কোন নারীকে দিয়ে যেন তল্লাশি চালানো হয়? একজন পুরুষ যদি একজন মুসলিম নারীকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি দেন, সেটি কতটা সভ্য আচরণ হবে?
ইসলামের নীতি অনুসারে, একজন খুনি কিংবা ধর্ষকও শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কারণেই জান্নাতে যাবে। সহিহ হাদিসে সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
এমনকি, শতাধিক খুন করার পরেও, শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার ইচ্ছা থাকলেই, একজন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবেন। [19] তাহলে যারা একটিও খুন করেন নি, অথচ কোনভাবে তাদের ভাগ্যে আল্লাহ আগেই জাহান্নামি লিখে দিয়েছেন, তাদের সাথে বিষয়টি ইনসাফ হলো কী?
মুসলিমদের জান্নাতের সুসংবাদ দিলেও, কোন অমুসলিম যত ভাল কাজই করুক না কেন, পৃথিবীর মানুষের যত উপকারই করুক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি।
অর্থাৎ দাস প্রথার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে দাস প্রথার কুপ্রথা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করা আব্রাহাম লিঙ্কন, কালো মানুষদের সমান অধিকারের পক্ষে সারাজীবন লড়াই করে যাওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা, সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা রাজা রামমোহন রায়, বিধবাবিবাহের পক্ষে সারাজীবন লড়াই করা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, এরকম হাজারো অসাধারণ মানবিক মানুষ, এরা সকলেই চিরস্থায়ী জাহান্নামী। সেইসাথে, আফ্রিকায় যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, পারিবারিকভাবে তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বড় হচ্ছে, অনাহারে থাকছে, এরাও সকলে কাফের হলেই জাহান্নামি। আর হলি আর্টিজানে যে সব ইসলামিক জঙ্গি একজন সাত মাসের গর্ভবতী খ্রিস্টান নারীকে কেটে টুকরো টুকরো করেছে, সেইসব জঙ্গি সকলেই জান্নাতি। শিশুদের স্কুলে বোমা মারা তালেবানদের প্রধান লাদেন কিংবা শতাব্দীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সন্ত্রাসী বাহিনী আইএস এর প্রধান বাগদাদী, এরা সকলেই জান্নাতেই যাবে। গোলাম আজম, মওদুদী, এদের মত গণহত্যাকারী এবং মানবতার শত্রুও জান্নাতি!
এই হলো ইসলামের ইনসাফ!