Uncategorized

মুসলমান পরিচয় কী বর্জন করতে হবে বর্তমান উগ্র মৌলবাদীতার কারণে

লিখেছেন মোঃ আব্দুল কাদের সুমেল on 25 October 2024 at 14:43

আওয়ামী দুঃশাসন এর যে দুর্দান্ত অবসান হলো ছাত্র-জনতার উন্মত্ত প্রতিরোধ ও উন্মাতাল আক্রমণে, তার নজির বোধকরি খুব বেশি নেই একটি স্বাধীন দেশে।

আমি নিজেকে একজন সাধারণ রক্ষণশীল মুসলমান হিসেবেই জেনে এসেছি সারাজীবন। নাস্তিকদের ঘৃণা করা, সমকামী/উভকামী/হিজরাদের অসভ্য বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সমাজের অপাংত্তেয় অংশ হিসেবে দেখাটাকেই স্বাভাবিক ভেবেছি। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তিকে ভেবেছি সবসময় মৃত্যুদন্ড দেয়ার মতো পাপ। একই যুক্তি অন্য ধর্মগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু আরোপ করিনি। কারণ বাকিগুলোকে “ভূয়া” ধর্ম ঠাওরে এসেছি।

কিন্তু সারাজীবনের সঞ্চিত এই ঘৃণাগুলো (মূল্যবোধ-ও বলা চলে) বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছি পাশ্চাত্যে অধুনাবিশ্বে আসবার পর। পাশ্চাত্য দুনিয়াকে বর্ণবাদের আলোকে দেখবার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেখলাম বাংলাদেশের সেই রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের মূল্যবোধগুলো একে একে ফিকে হয়ে গেলো। এখানে দেখলাম নাস্তিকদের ওপর কেউ চড়াও হয়না। চার্চ নিয়ে কটূ কথা বললে কোনো উগ্র মৌলবাদী খ্রীস্টান হামলা করে বসেনা। সমকামীদের সাধারণ সবার মতোই সম-অধিকার নিয়ে চলতে দেখি। কিছু রদ্দিকালের বৈষম্য হয়তো রয়ে গেছে ভিতরে ভিতরে, কিন্তু আইনের শাসন খুবই কড়া এবং সমকামী/উভকামীদের সমস্ত মানবাধিকার নিয়ে অকুন্ঠচিত্তে জীবনধারণ করতে দেখি। 

অথচ বাংলাদেশে সমকামীতা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ধর্মানুভূতিতের আঘাতের আইন এর মোড়কে ধর্ম নিয়ে কোনো সমালোচনা নিষিদ্ধ। নাস্তিকদের মেরে ফেলা হয়। এ কোন সমাজে আমি ছিলাম?

এখন দেখছি উগ্রতম মৌলবাদীদের পুনরুত্থান আওয়ামী পতনের পর। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধ্বংশ করবার একক এজেন্ডা নিয়ে যেন শিবির, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরীরের মতো উগ্র জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোর পুনর্জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগকে এই ধর্মান্ধ উগ্র দলগুলোকে দমিয়ে রাখার কৃতিত্ব দিতেই হয় যদিও তাদের ফ্যাসিবাদী শাসন সে কৃতিত্বকে ম্লান করে দেয়। ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়া, শিল্পকলা গুড়িঁয়ে দেয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সাংঘর্শিক।

এই সুযোগে এই জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে বা তাদের নিষিদ্ধ  স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হবে। ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করতে হবে অবিলম্বে। সমকামী/নাস্তিক/উভকামী এদের সবাইকে বাকিদের সাথে সমানভাবে দেখতে হবে। ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়, রাষ্ট্রীয় নয়। আমরা ভারত, ইরান, আফগানিস্তান চাইনা। উদারনৈতিক বাংলাদেশ চাই। এই চাওয়াতে যদি আমাকে বাজে মুসলমান বলেন তথাকথিত মৌলবাদীরা, তাতেই সই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *