Atheism in Bangladesh Opinion

নাস্তিকতা: বিশ্বাস নয়, বোধের এক অন্যরকম পথচলা

মোঃ আফজল হুসেন (রুবেল)

৩রা এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকতা—এই শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকের মনে প্রশ্ন, বিতর্ক কিংবা একরাশ নেতিবাচক ধারণা জেগে ওঠে। কারণ, আমাদের সমাজে ‘নাস্তিক’ শব্দটির মানে প্রায়শই হয়ে দাঁড়ায় ঈশ্বরবিরোধী, ধর্মদ্রোহী, এমনকি কখনো কখনো নৈতিকতাহীন। অথচ বাস্তব সত্যটা কি এত সরল?

নাস্তিকতা মানে কি শুধু ‘ঈশ্বরে অবিশ্বাস’?

না। নাস্তিকতা মানে শুধু ঈশ্বরে অবিশ্বাস নয়; বরং এটি একটি বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে মানুষ যুক্তি, দর্শন, বিজ্ঞানের আলো ও অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে সত্যকে উপলব্ধি করতে চায়। একজন নাস্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, কারণ তার কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়।

নাস্তিকরা নিষ্ঠুর নয়, বরং তারা মানবতাকে সর্বোচ্চ জায়গায় রাখেন। তারা ন্যায়ের পক্ষে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, এবং প্রশ্ন করার স্বাধীনতার পক্ষে।

নাস্তিকতা ও নৈতিকতা: সম্পর্ক আছে কি?

ধর্ম থেকে নীতিশাস্ত্র এসেছে—এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু নৈতিকতা আসলে এক ধরনের সামাজিক চুক্তি, যার ভিত্তি হলো সহাবস্থান, সহানুভূতি, এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা। একজন নাস্তিক যখন অসহায়ের পাশে দাঁড়ান, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, ভালোবাসেন—তখন তিনি প্রমাণ করেন, নৈতিকতার জন্য ধর্ম আবশ্যক নয়, প্রয়োজন হৃদয় ও বিবেক।

একটা প্রশ্ন—তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?

এই প্রশ্নটা একজন নাস্তিকের জন্য প্রায়ই বিতর্কের শুরু। অথচ উত্তরটা হয়তো এরকম—
“আমি বিশ্বাসের বদলে জানতে চাই। আমি প্রমাণের অপেক্ষায় থাকি। আমি অন্ধ নই, আমি প্রশ্ন করি।”

নাস্তিক হওয়া মানে সব কিছুর বিরোধিতা করা নয়। বরং এটা একটা সচেতন অবস্থান—যেখানে মানুষ নিজেই নিজের জবাবদিহি করে, নিজের ভুল শোধরায়, এবং নিজের চিন্তার স্বাধীনতায় পথ চলে।

আমরা কি নাস্তিকতাকে ভয় পাই? নাকি প্রশ্ন করতে ভয় পাই?

নাস্তিকতা কখনোই সমাজের শত্রু নয়। বরং এমন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন আছে, যেটা প্রশ্ন করতে শেখায়। যেটা মানুষকে প্রাচীন গোঁড়ামি থেকে বের করে যুক্তির আলোয় দাঁড়াতে শেখায়। ইতিহাসের বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ—যারা নাস্তিক ছিলেন, তারাই মানব সভ্যতার অগ্রগতির বড় চালিকাশক্তি ছিলেন।

বিশ্বাস থাক বা না-ই থাক, মানবতা থাকুক

শেষ কথা একটাই—একজন মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কি না, সেটা দিয়ে নয়; বরং তিনি কতটা মানবিক, সহানুভূতিশীল ও যুক্তিবাদী—এটাই হওয়া উচিত তার পরিচয়। নাস্তিকতা একটি চিন্তার ধারা, যা যেমন শ্রদ্ধার দাবি রাখে, তেমনই যুক্তিরও।

বিশ্বাসীরা যেমন বিশ্বাসের অধিকার রাখেন, তেমনি অবিশ্বাসীরও চিন্তার অধিকার থাকা উচিত।

পৃথিবী হোক এমন এক জায়গা—যেখানে ঈশ্বর থাকুক, না থাকুক,
মানুষ থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *