মোঃ আফজল হুসেন (রুবেল)
৬ই নভেম্বর, ২০২৫

সমাজে বহুদিন ধরেই লিঙ্গ ও যৌনতা সংক্রান্ত আলোচনাগুলো ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমকামিতা, অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন নিজেরই লিঙ্গের প্রতি প্রেম বা যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন। যদিও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং বৈচিত্র্যময় যৌন প্রবৃত্তি, তবুও সমাজে এই বিষয়ে এখনো অনেক ভুল ধারণা, কুসংস্কার এবং বৈষম্য বিদ্যমান।
সমকামিতা কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, সমকামিতা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি যৌন প্রবৃত্তি। এটি মানুষের জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বহু আগেই সমকামিতাকে কোনোরকম মানসিক ব্যাধি হিসেবে গণ্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম এবং সভ্যতায় সমকামী সম্পর্কের নানা উদাহরণ আছে। এমনকি প্রাণীজগতেও বহু প্রজাতির মধ্যে সমকামী আচরণ দেখা যায়, যা এটি যে প্রাকৃতিক—সেই সত্যকে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা করে।
সমাজে সমকামীদের প্রতি আচরণ
আমাদের সমাজে সমকামী মানুষরা এখনো নানা রকম কটূক্তি, উপহাস, সামাজিক বর্জন এমনকি সহিংসতার শিকার হন। এটি কেবল একটি ব্যক্তির মর্যাদার উপর আঘাত নয়, বরং মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। একেকজন মানুষ যেমন স্বাভাবিকভাবে ডানহাতি বা বাঁহাতি হয়, তেমনই যৌন প্রবৃত্তিও তার ব্যক্তিগত এবং সহজাত একটি বিষয়। এটি নিয়ে কাউকে হেয় করা অন্যায়ের শামিল।
ধর্ম ও সংস্কৃতির ভূমিকাও বিবেচনার দাবি রাখে
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ধর্ম ও সংস্কৃতি মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে মনে রাখতে হবে, ধর্ম মানুষকে ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহনশীলতা ও মানবিকতা শেখায়। কেউ একজন সমকামী হওয়ায় তাকে ঘৃণা করা, অবজ্ঞা করা বা তাকে অপরাধী হিসেবে দেখা কোনো ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা নয়।
আইন ও অধিকার
বিশ্বের অনেক দেশেই সমকামীদের অধিকার এখন আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে—বিয়ে, দত্তক নেওয়া, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রভৃতি। বাংলাদেশে যদিও এখনো সেই আইনি স্বীকৃতি আসেনি, তবে ধীরে ধীরে এই বিষয়ে আলোচনা ও সচেতনতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
আমাদের করণীয় কী?
- সচেতন হওয়া – সমকামিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা ও ভ্রান্ত ধারণা দূর করা।
- সহানুভূতিশীল হওয়া – মানুষকে তাদের পরিচয় ও পছন্দের জন্য বিচার না করে তাদের অনুভূতিকে সম্মান জানানো।
- সহানুভূতি শেখানো – পরিবার, স্কুল ও সমাজে শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও বৈচিত্র্য গ্রহণের শিক্ষা দেওয়া।
সমকামিতা কোনো ‘অসুখ’ নয়, কোনো ‘অপরাধ’ নয়, এটি মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত বৈচিত্র্যের একটি অংশ। একজন মানুষ তার লিঙ্গ, ধর্ম, জাত, বা যৌন পরিচয়ের জন্য নয়, তার আচরণ ও মানবিক গুণাবলীর জন্য সম্মান পাওয়ার যোগ্য। সমাজে সব মানুষকে সমানভাবে মর্যাদা ও ভালোবাসা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যই তো মানবতার প্রকৃত সৌন্দর্য।