বিজ্ঞান

যেভাবে জীবনের শুরু: কোষের জন্ম

২০০০ সালের প্রথমদিকে জীবনের প্রথম পথ চলা কীভাবে শুরু হয় এই গবেষণার প্রধান দুইটা তত্ত্ব প্রচলিত ছিল। আরএনএ ঘরানার বিজ্ঞানীগণ মনে করতেন প্রাণের বিকাশ হয়েছিল নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এমন অণুজীব থেকে। ইতিমধ্যে যেসব বিজ্ঞানীগণ “বিপাক ক্রিয়া” প্রথম শুরু হয়েছিল বলে মনে করতেন তারা গভীর সমুদ্রের আগ্নেয়গিরির গরম তরল প্রবাহের জ্বালামুখে কীভাবে প্রাণের বিকাশ হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ হাজির করলেন। যাইহোক চলমান এই বিতর্কের মধ্যেই আমাদের সামনে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে প্রাণের উৎস গবেষণার তৃতীয় আর একটা মতবাদ।

আমরা জানি পৃথিবীতে জীবিত সব প্রাণই কোষ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি কোষই মূলত নরম তুলতুলে ছিদ্রযুক্ত গোলাকার সদৃশ বস্তু যার চারিধার অমসৃণ পর্দার আবরণে ঘেরা। কোষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল কোষ জীবনের সব প্রয়োজনীয় উপাদান একত্রে ধরে রাখে। যদি কোষের দেয়াল কোন কারণে জীর্ণ হয়ে ধ্বসে যায় তাহলে কোষের মূল উপাদান বেরিয়ে পড়ে এবং কোষের মৃত্যু ঘটে। ঠিক যেমন যদি কোন মানুষের উদর থেকে নাড়ীভুঁড়ি কেটে ফেলে দিই তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সে আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না।

পৃথিবীর আদিতে প্রচণ্ড তাপ আর ঘূর্ণিপাকে কিছু রাসায়নিক উপাদান একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ গঠিত হয়। কোষের বাইরের পর্দার আবরণ এতই প্রয়োজনীয় যে প্রাণের উৎস সন্ধানী কিছু গবেষক যুক্তি দেখালেন যে, কোষ সৃষ্টির আগেই কোষের আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করতেন ‘যেভাবে জীবনের শুরু’ বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচিত “জীনতত্ত্ব প্রথম” এবং চতুর্থ অধ্যায়ের “বিপাক ক্রিয়া প্রথম” ধারণাগুলো বিভ্রান্তিকর। তাদের বিকল্প মতবাদটি ছিল “কোষের কাঠামো পৃথকীকরণ প্রথম” ঘটেছিল। এই মতবাদের পুরোধা ব্যক্তি হলেন ইটালির রোমে অবস্থিত রোমা ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ের লুইগি লুইজি।

লুইজির মতবাদের স্বপক্ষে কারণ যথেষ্ট সহজ সরল হলেও ব্যাখ্যা করার জন্য এত সহজ ছিল না। কীভাবে আপনি প্রমাণ করবেন “বিপাক ক্রিয়া” বা “স্বয়ম্ভূ আরএনএ” মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব যদি একটা বিশেষ স্থানে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো যায়। অন্যথায় অণুজীব থেকে প্রাণ সঞ্চার হবে কোথায়?

যদি আপনি উপরের যুক্তি স্বীকার করে নেন তাহলে প্রাণ সৃষ্টির একটাই উপায় আছে সেটা হল, যেকোনভাবে আদি পৃথিবীর উত্তপ্ত ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেও প্রাণ সৃষ্টির কিছু কাঁচামাল একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ বা প্রাথমিক কোষের জন্ম নেয়া। প্রতিকূলতা পেরিয়ে গবেষণাগারে এই তত্ত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণাগারেই একটা সরল এককোষী জীবন্ত কোষ বানানো সম্ভব করেছেন।6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *